সাঁতার না জানলে উত্তাল সমুদ্রে যেমন কেউ ঝাঁপ দিবে না, তেমনি ব্যবসায়ের কিছু জরুরী বিষয় জানা-বোঝা ছাড়া এই তীব্র প্রতিযোগীতায় নামা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অন্যান্য নানা দক্ষতার মতো ব্যবসাও আমাদের হাতে কলমে শিখতে হবে। তবেই এখানে ভালো করার সম্ভাবণা বহুগুণে বেড়ে যাবে।
কলেজে থাকতে দুরুম দারুম করে একটা প্রিন্টার, স্ক্যানার, দশ হাজার দিয়ে একটা টেবিল কিনেছিলাম। ক্যামেরা কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ইচ্ছে ছিলো এলাকায় ফটো স্ট্যুডিও দেয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর আর সেই ইচ্ছের বাস্তবায়ন হয় নাই। সেকেন্ড ইয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটা ফুডকার্ট নিয়ে শুরু করেছিলাম কিন্তু পরিবেশগত জটিলতায় কয়েকমাস পর বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
এছাড়াও আরো কিছু টুকিটাকি ইনভেস্টমেন্টের নামে কিছু টাকা লস করেছি। লস করেছি বললে ভুল হবে কষ্টার্জিত টাকায় অভিজ্ঞতা ক্রয় করেছি। তবে যেটা শিখেছি তা হচ্ছে- ব্যবসা আমাদের শিখতেই হবে। এটা পৃথিবীর অন্যতম একটা যোগ্যতার বিষয়, আপনা আপনি চলে আসবে না।
বিজনেসে অনার্স-মাস্টার্স যা-ই ডিগ্রি থাকুক, ওই বইয়ের থিউরী সরাসরি ব্যবসায়ে খুব বেশি কাজে আসে না। ওই যে প্রথম লাইনে বলা সাঁতার কাটার মতো। কিভাবে সাতাঁর কাটতে হয় এটা মুখে মুখে অনেক বাচ্চাই বলতে পারবে। কিন্তু পানিতে নামিয়ে দিলে নাকানি-চুবানি খেয়ে মরে মরে অবস্থা হয়।
ব্যবসা শুরুর সময়ে আমরাও ওই বাচ্চাদের মতই। কে যেন বলেছিলো বুদ্ধি যতটুকু হয় ধোঁকা আর ধাক্কা খেয়েই হয়। ডিজাইন এন্ড প্রিন্টিং নিসে এ সাপ্লাইং ফার্ম হিসেবে গ্রাফিক কমপাস শুরু করেছিলাম ২০১৯ সালে। বছর ঘুড়তে না ঘুড়তেই করোনা মহামারী এসে দিয়ে গেলো ধাক্কা! বুঝলাম ব্যবসায়ে স্বাধীনতা থাকলেও অনিশ্চিয়তা অনেক বেশি!
ব্যবসায়ী হতে গেলে, উদ্যোগ নিতে গেলে সাহস থাকা লাগবেই। চাকুরীর মোটামুটি সহজ জীবন ছেড়ে ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ সহজ ব্যাপার না। চলতে চলতে অনেক ধাক্কা খেয়েছি, সামনে হয়তো আরো অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্বপ্ন যেহেতু দেখি “একা ভালো থাকতে চাই না। আমার অনেক হাসিমুখ চাই, অনেক অনেক” তাই এই উদ্যোগের পথেই আবার ফিরতে হয়।
প্রিন্টিং প্রেস সাপ্লাইয়ারের কাজ করতে গিয়ে দেখলাম নিউবি হিসেবে ভেন্ডররা দাম বেশি রেখেছে, মাঝে মাঝে ফল্টি প্রোডাক্ট দেয়া, কম মানের কাজ ধরিয়ে দেয়া সহ অনেক কিছু। খুব বুঝতে পারলাম কাজ বুঝতে না পারলে আপনি কাজ আদায় করতেও পারবেন না ঠিকঠাক মত। তাই তাদের কাউকেই দোষ দেই না। ওই গুলো আমাকে অনেক অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে।
বর্তমান ছোট্ট বিজনেসে উল্লেখযোগ্য তেমন আর্থিক বিনিয়োগ নেই। বহু রাত জাগা, অনেক ঘন্টা সময় ও শ্রম আছে। তথ্য সংগ্রহ থেকে পরিকল্পনা, বিজনেস মডেল-রেভিনিউ মডেল দাড় করানো, লিড কালেক্ট ও ম্যানেজ করা সহ ভালো রকম কাজই করতে হয়েছে। বি টু বি, সার্ভিস এ্যাজ এ্যা প্রোডাক্ট মডেলে ডেভলপ করছি। চেষ্টা করছি মাইক্রো নিসে ভায়াবল কিছু সলিউশন নিয়ে আসার। দেখা যাক কতটুকু ভ্যালু ক্রিয়েট করতে পারে।
তাই নতুন যারা শুরু করবেন, মুনাফা করার চাইতে শেখার মন নিয়ে শুরু করেন। আমাদের ছোট উদ্যোক্তাদের অনেক প্রেসার, দৌড়াদৌড়ি, ক্রাইসিস। কিন্তু এই গুলো তখনই আপনি ইনজয় করবেন যখন মুনাফার চাইতে সেবার মনোভাব টা বেশি থাকবে + প্রথম বাচ্চার হাতের আঙ্গুল ছোঁয়ার মত হৃদয় দিয়ে ফিল করবেন।
এবার চলুন বিজনেস শিখার কয়েকটি খুবই ফলপ্রসূ মেথড নিয়ে আলোচনা করা যাক। যা আপনার দ্রুত বিজনেস শিখতে ও দক্ষতার সাথে প্রোজেক্ট হ্যান্ডেল করতে অনেক হেল্প করবে।
- বিজনেস শেখার জন্য অবশ্যই আপনার মাইন্ডসেট ঠিক করতে হবে, বিজনেস নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, বিজনেস নিয়ে ভাবতে হবে, যারা বিজনেস ভালো বুঝে তাদের সাথে মেশার চেষ্টা করতে হবে। তাবৎ দুনিয়াটা চলছে বিজনেস এর উপর, তাই হুট করে বিজনেসে নেমে টুট করে বড়লোক হয়ে যাবেন ভাবার কোন কারণ নাই। অন্যান্য কঠিন কঠিন দক্ষতার মতো বিজনেসও সময় দিয়ে শিখতে হবে।
- খুবই ভালো হয় আপনি যদি পছন্দের ব্যবসায়ে কয়েক মাস চাকুরি করেন। তাহলে আপনি বিজনেস এর ভেতর বাহির নিয়ে ভালো ধারনা পাবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার বিজনেস রিলেটেড বইগুলো প্রতিনিয়ত পড়াশোনা করতে হবে এবং সেগুলো কিভাবে ওই বিজনেসে এ্যাপ্লাই করা যায় ভাবতে হবে। তাহলে দেখবেন বিজনেস শেখার এই যাত্রাটা আপনার অনেক ইন্টারেস্টিং লাগবে।
- বিজনেস শেখার আরো কার্যকরি উপায় বিজনেস এর প্রসেস, মডেল, রেভিনিউ স্টিম নিয়ে চিন্তা করুন। বাসে হকার নানান রকম জিনিস পত্র বিক্রি করে দেখেছেন নিশ্চয়? এমন ছোট ছোট বিজনেসের সাপ্লাইচেইন বা ডিসট্রিবিউশন মডেল নিয়ে একটু ভাবেন। এটার সোসিং কিভাবে হয়, এরা কিভাবে কেনে, স্টোর করে, সেল করে। কতটুকু প্রফিট রাখে, দিনশেষে কতটুকু পকেটে থাকে ইত্যাদি অনেক কিছু বের করার আছে। এমন করে আপনার যে বিজনেসে আগ্রহ সেটা নিয়েই একটু স্ট্যাডি করেন, দেখবেন অনেক ডেটা হাতে চলে আসবে। বর্তমানে তথ্য হচ্ছে বড় সম্পদ, সিদ্ধান্ত নেয়ার মূল উপাদান। তাই ব্যবসা করতে গেলে তথ্যের গুরুত্ব বুঝতেই হবে।
তো শুরু করুণ- ব্যবসা শেখার জার্নি! মাঝে মাঝে ব্যবসা রিলেটেড বিভিন্ন পোষ্ট পেতে সাথে থাকুন। ইনশাআল্লাহ উপকৃত হবেন।
একটু মোটিভেশন নিবেন?
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সবকিছু গুছিয়ে, সাজিয়ে শুরু করতে পারে না। তাদের মানি ক্রাইসিস থাকে, ভরসা করার মত মানুষের ক্রাইসিস থাকে। তবে তাদের একটা খুব দামি জিনিস থাকে, তা হলো চোখ ভরা স্বপ্ন ও বিশ্বাস।
এই আগোছালো, ভিশনারি, স্ট্রাগল করা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবহেলা করে, অপমান করে মনোবল নষ্ট করিয়েন না। তাকে তার সকল প্ল্যান, স্বপ্নকে ছুড়ে ফেলে আবার চাকুরীর বাজারে দৌড়ঝাপ দিতে বাধ্য করিয়েন না।
যে চাকুরী করতে চায়, তার জন্য চাকুরী ই বেস্ট। যে উদ্যোক্তা হতে চায় তার জন্য সেই পথে বাঁধা না হয়ে, পারলে পথ সুগম করুন।
প্যাশনের পেছনে ছুটা কত্ত আনন্দের-মজার, সেটা আপনি বুঝবেন না। প্রথমে প্রতিদিন ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করা লাগছে, আয়ও খুব অল্প, সমাজ দাম দেয় না ইত্যাদি। কিন্তু যখন মনে হয়, আই এ্যাম ক্রিয়েটিং সামথিং ফ্রম অলমোস্ট নাথিং, এই সুখটা ফিল করার বিষয়