জীবনবোধ থেকে কিছু ছোট ছোট উপলব্ধি; প্রায়ই নোটবুকের আনাচে কানাচে লেখা হয়। ভাবছি তাদেরও একটা ঠিকানা হোক, সময়ে সময়ে চোখ বুলানো যাবে। গন্তব্যহীন টুকিটাকি লেখাগুলোর নাম দিলাম তাই— খুচরো দর্শন।
শূণ্য.
উপেক্ষা আর অপেক্ষার কষ্ট সইতে না জানলে তাঁর জন্য উদ্যোক্তার জীবন না। সংকট আসবে, মানুষ স্বভাবতই সমালোচনা করবে, দূরে সরেও যাবে। তবে যেখানেই যাও, যা-ই করো; বিশ্বস্ততায়, দক্ষতায়, জ্ঞানে আলাদা করে যেন চেনা যায়।
ভালো সময়ের অপেক্ষায় খারাপ সময়ে ধৈর্যের সাথে লেগে থাকাও– স্বীকৃতিহীন সাফল্য
এক.
[ ১ ] সবকিছু তুমার জানা দরকার নাই। তবে যা যা জানা লাগবে— খুব ভালো করে জানা দরকার। এ্যাভারেজ মানুষ হয়ে লাভ নেই, যে কাজই করো- চেষ্টা করো হাই-ভ্যালু-পার্সন হতে। কদর পাবা।
[ ২ ] কাউকে খুব বেশি বুঝাতে যাবে না— যে তুমার কথার গুরুত্ব দেয়, সে অল্পতেই আমলে নিবে। যার কাছে তুমার কথার তেমন মূল্য নেই, তাকে বেশি বুঝানো মানেই বিরক্তিকর হওয়া।
[ ৩ ] তাদের সাথে বেশি সময় কাটাও, যোগাযোগ বাড়াও, অনুসরণ করো— যাদের মতো তুমি হতে চাও। নিজের সামনে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর মডেল থাকলে, চলার পথটা আরো সহজ হবে। তাই কিছু রোল মডেল ঠিক করো।
[ ৪ ] শুধু লেবাসে নয়, ভেতর থেকে দ্বীনদার হও। এটা মোটেই সহজ কাজ না। দ্বীনের অপার যে সৌন্দর্য, পরম যে প্রশান্তি এটা আত্মিক। এটা উপভোগ করতে হয় হৃদয় দিয়েই। নিজেকে আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সাবমিট করে দিতে হবে। লেবাস আছে, ভেতরটা ফাঁপা- এমন হলে কলবে নূর আসা কঠিন।
রব্বে কারীম, নতুন বছরটা বরকতময় করুণ। আমীন।
দুই.
যে নিজেরে বুঝাইতে পারে না, সে-ই সবচেয়ে বড় অবুঝ! এলোমেলো দিনগুলো এবার তবে গুছাও ভাই! হাজারটা অপশনের দ্বিধায় সময় চুরি, ভাবনা বিনষ্ট ছাড়া আর কোন উপকার নাই। যাত্রার আগে গন্তব্য ঠিক করা চাই, তারপর নিজের ও পরিবেশের সামর্থের বিচারে ঠিক হবে কোন বাহনে চড়তে হবে।
তিন.
আজি এই নিশিতে বোহেমিয়ান জীবনের ইতি টানলাম। অন্যের দেখানো পথে, অপরের চাহিদা মতে কিছু তো হেঁটে দেখলাম— আসলে স্রোতে ভাসার লোক নই বোধহয়! খুব ক্লান্ত লাগে, প্রোডাক্টিভিটি জিরোতে চলে আসে। আমি যে বুকের ভেতর লালন করা স্বপ্নটুকু বাঁচিয়ে রাখতে চাই…
চার.
প্রচুর শব্দ ব্যয় করেছি, বুঝেন নি। তারপর এক দীর্ঘ নীরবতায় ডুব দিয়েছি আপনি তার ভাষাও বুঝেন নি। তাই আর কান্না দেখাইনি, আপনি চোখের জলের ভাষাও বুঝবেন না। শান্তি চেয়েছি, তাই কোমল কথার পরশ বুলিয়ে ভীষণ ভাবে আহত হয়েছি।
অতঃপর গুরু আমাকে বললেন-
“চুপ হয়ে যাও। যত বেশি নীরব হবে,
তত বেশি শুনতে পাবে”
উপদেশ গ্রহণ করলাম। পথটায় নীরবে হাঁটতে শুরু করলাম। গন্তব্য জানি, তবে শূণ্য হতে কিভাবে পৌঁছানো যাবে— এখন সাধনাটা তার। এই পথের যদি কেউ সঙ্গী হয় তবেই আপন করে নিবো। নতুবা পথটা একার।
ওই কথাটা ভালো লেগেছে- “যা পেতে ইচ্ছে করে, আমি তাকেই বলি সুন্দর। সুন্দরের নির্দিষ্ট কোনো রূপ নেই। সে আপেক্ষিক”
পাঁচ.
যাদের ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, সাপোর্ট দেয়ার মতো তেমন কেউ নেই। কিন্তু জীবনে ভালো কিছু করার স্বপ্ন আছে তাদের পরিশ্রম করার বিকল্প নেই। তবে পরিকল্পিত প্রচেষ্টা যে কোন অবস্থান থেকে ভালো কিছু করার রাস্তাটা সহজ করে দেয়। আর এক্ষেত্রে আমাদের জন্য দুটি স্ট্র্যাটেজি থাকতে হয়-
- সাইভাইবল স্ট্র্যাটেজিঃ যেটার মাধ্যমে বর্তমানটা চালাতে হবে। টিকে থাকাই এখানে স্বার্থকতা। অর্থাৎ পড়াশোনা কালীন বা সদ্য পড়াশোনা শেষ হয়েছে এমন সময়টা অতিবাহিত করার একটা স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে। বেসিক প্রয়োজন মেটানোর মতো উপাজর্ন থাকতে হবে। এটা হতে পারে টিউশন, পার্টটাইম জব, পার্টটাইম ব্যবসা সহ অন্য যে কোন সাময়িক কাজ।
- গ্রোথ-স্ট্র্যাটেজিঃ এটা ড্রিম ক্যারিয়ার ফোকাসড স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ জীবনে যে ক্যারিয়ারটা গড়তে চাই, সেটা ফোকাস করে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা। সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করা। এই ক্ষেত্রে পড়াশোনা, স্কিল ডেভলপ করা, কমিউনিটিতে জয়েন করা, মেন্টর খুঁজে বের করা সহ আরো জরুরী কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। নিজেকে ধারাবাহিক একটি ডেভলপমেন্ট ফানেলের মধ্য দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। যেমন ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখি তা যেন আমরা ডিজার্ভ করি।
ছয়.
আবেগ-অনুভূতিকে এভাবে কখনো অনুভব করা হয়নি আগে। উপলব্ধি করা হয়নি- একটা মানুষের প্রতি এমন গভীর মায়া কীভাবে হয়ে যায়! প্রতিটি মানুষের ভেতরেই একটি প্রেমময় সত্তা লুকিয়ে আছে এটা বুঝার জন্য এই ফিলিংসটুকু কাজে দিচ্ছে। মনের মতো কাউকে পেলে রসকষহীণ পুরুষও বোধহয় প্রেমিক হয়ে উঠে।
সাত.
ক্যারিয়ার গঠনের তীব্র প্যারা থাকলেও প্রতিদিন সময় ব্যয় করে লেখালেখি চলেছে আলহামদুলিল্লাহ। গল্প বলতে ভালোলাগে, গল্পের ভাষায় বলতে ভালোলাগে। আর পবিত্র কুরআনেও মহামহিম এই দার্শনিক শিক্ষা দিয়েছেন যে, মানুষের ফিতরাত এমন যে তারা ঘটনা, দৃষ্টান্ত, বর্ণনা শুনতে পছন্দ করে এবং তার মাধ্যমে শিক্ষা নেয়া আমাদের মনস্তত্বের জন্য বেশি উপযোগী।
এজন্যই দেখতে পাই যে- পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অনেক ঘটনা বা দৃষ্টান্ত বর্ণনার মাধ্যমে আমাদের বার্তা দিয়েছেন। নতুবা আমাদের কী কী করণীয় এবং কী কী বর্জনীয় এমন একটি তালিকা প্রদান করলেও আমাদের কোন কিছুই বলার অবকাশ থাকতো না। মানুষের জন্য সহজ ও উপযোগী করে যে নির্দেশনাবলী বর্ণনা করেছেন এর মধ্যেও রয়েছে তাঁর অপার অনুগ্রহ, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এটিও একটি বড় কারণ।
ক্যারিয়ার গঠনে একটু নিজের মতো ভাবছি বলে কিছু অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে যেহেতু জানি কী করছি এবং কোন পথে হাঁটছি- তাই প্রতিকূলতার বিপরীতে ধৈর্যকেই সঙ্গী বানিয়েছি। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ক্যারিয়ারে যাওয়ার আগে সাময়িক একটা সময় আছে— ভীষণ যন্ত্রণার। এর মধ্যে পরিচিত মানুষের অপরিচিত চেহারা বড় প্যারাদায়ক… ব্যাখ্যা করার সময় নয় এটা।
যাইহোক, ক্যারিয়ার প্ল্যান বলতে আমার ভাবনা খুব সিম্পল এবং স্পেসিফিক-
- ভ্যালু ক্রিয়েট করে এমন কোথাও কাজ করা- যে কাজ ও উপার্জন অবশ্যই বৈধ হবে।
- এমন ক্যারিয়ার পাথ যা এতদিনের পড়ালেখার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অথাৎ বিজনেস-ম্যানেজমেন্ট-মার্কেটিং সংক্রান্ত। এতবছরের পড়াশোনার প্রয়োগই হবে না, এমন ক্যারিয়ার ট্র্যাকে যেতে চাই না- তা আর্কষণীয় মনে হলেও না।
- এমন ক্যারিয়ার চাই- যেখানে বই পড়া ও লেখালেখির সময়-সুযোগ পাওয়া যাবে। কেউ ক্ষমতা অনুরাগী, কেউ অর্থ অনুরাগী থাকে কিন্তু নিজের ভেতরে কিছুটা জ্ঞান অনুরাগ টের পাই বোধহয়। ইচ্ছে হয় জীবনে যা-ই করি, অনেকগুলো উপকারী বই যেন লিখে যেতে পারি। যা এই অনিশ্চিত ক্ষনস্থায়ী জীবনকে একটু দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে, অন্যের জীবনে কিছু ফাঁয়দা পৌঁছাতে পারে ইনশাআল্লাহ।
অনেক বেশি ভাবি কি না জানি না। তবে জীবন-ক্যারিয়ার নিয়ে আমার ভাবনা স্বচ্ছ। কী কী বিষয় কতটুকু পেলে আমি সুখী হবো তা ঠিক করতে পারলে অল্পতেও আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারি। কেউ ভাবতে পারে, যেখানে আজকাল একটা চাকরি যোগাতেই পাছারবায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম সেখানে এতসব ভাবনা বেকার! হয়তো তাই, নয়তো তাই নয়। তর্কে যাবো না, তর্কের মুড নেই।
যারা লোকের কথার পরোয়া না করে নিজের প্যাশনের পথে হেঁটেছে তাদের আমি খুব পছন্দ করি। দিনশেষে সকল প্রচেষ্টাকে একটি সুঁতায় বাঁধতে চাই তা হলো— “একা ভালো থাকতে চাই না। আমার অনেক হাসি মুখ চাই, অনেক অনেক”
কী করতে পারবো, কতটুকু করতে পারবো জানি না। আমি সত্যিই জানি না… মহামহিম রব যতটুকু তৌফিক দিবেন আমি চেষ্টা করে যাবো। অন্তত একজন মানুষের জীবন যদি সহজ হয়, সুদীর্ঘ স্বপ্ন মালার একটি পুঁতি ভাববো সেটাকেই…
আট.
মাঝে মাঝে একান্ত আপন মানুষগুলোর জন্য আপনাকে হতাশায় ডুবে যেতে হবে। উদ্যোম ভরা একটা চঞ্চল মানুষের মৃত মানুষের জীবন হবে। ভালো চাওয়ার ছলে বিষম ক্ষতি করে দিবে! আপনার কিছু করার থাকবে না, বলার থাকবে না, এমন কি অভিযোগ করারও কোন জায়গা থাকবে না।
অসহ্য চাপা কষ্ট লুকাতে লুকাতে অনুভূতি-আবেগ বলতে আপনার আর কোন উচ্ছাস থাকবে না। সাফল্যের আগ্রহ, কাজ করার উন্মাদনা, লক্ষ্য জয়ের প্রেরণা সব নষ্ট করে দিবে।
আপনি কষ্ট হতাশায় বুক ফেঁটে কান্না করতে চাইবেন, কান্না করতে পারবেন না। দিনের পর দিন মানসিক চাপে পিষ্ট একটা মানুষের চোঁখ কান্না করা ভুলে যায়। তখন কেবল কলিজা থেকে কাঁদে… শব্দ হয় না বলে কেউ জানতেও পারে না।
নয়.
কাউকে ঠকিয়েও আপনি জিতে যেতে পারেন। মনে হতে পারে যা ডিজার্ভ করতেন তার চেয়ে বেশি কিছু পেয়েছেন। সুখের নানা সামগ্রী দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারেন কিন্তু অনাবিল শান্তি পাবেন না। সময়ে সময়ে সরল বিশ্বাস নিয়ে ঠকে যাওয়া মানুষটার দীর্ঘশ্বাস বহু দূর থেকে আক্ষেপ হয়ে ভেসে আসবে। অনেক কিছুর ভেতরও গুমোট একটা ভ্যাপসা মন খারাপের উপলক্ষ্য টের পাবেন। কিছু একটা খারাপ ঘটলেই মন গাইবে, না জানি তাঁর হাপিত্যেশ!
ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কাউকে আঘাত দিলে কিংবা ঠকালে ক্ষমা চাইতে শিখুন। নানা ভাবনায় হীনমন্যতার ঘুনপোকা লালন করবেন না।
দশ.
সৎ ও হালালভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে উপার্জনে একটু পিছিয়ে থাকেন; আত্মীয়-স্বজন, বন্ধ-বান্ধব এমনকি পরিবারের মানুষের থেকেও এমন আচারণ পাবেন! মনে হবে সবাই তাঁর জায়গায় ঠিক, আপনিই ভুল!
আমার রিজিক যতটুকু আছে ততটুকু আমি শরীয়তের সীমারেখায় থেকেই পেতে চেষ্টা করবো… আমি জানি এই পথ সহজ না, মানুষের অবহেলা-উপেক্ষা সহ্য করাও সহজ না। দেখা যাক…
হ্যাপি লার্নিং। আরো খুচরো দর্শনের জন্য চোখ রাখুন এই ব্লগে…